নিজস্ব প্রতিবেদক ॥ বরিশালে ভাষা সৈনিক মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ হোসেন কালুর (৯১) নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার সকাল ১০টায় নগরীর বগুড়া রোডের শ্রী চৈতন্য মোহন বিদ্যালয় মাঠে তার প্রথম নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এতে সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ফারুক হোসেন, প্যানেল মেয়র গাজী নাঈমুল হোসেন লিটু, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তালুকদার মো. ইউনুস, জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. নাজমুল হুদা, মুক্তিযোদ্ধা মহিউদ্দিন মানিক ও এমজি কবির ভুলুসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার বহু মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এর আগে চৈতন্য স্কুল মাঠে মরহুম মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ হোসেন কালুকে পুলিশের একটি চৌকশ দল গার্ড অব অনার এবং রাষ্ট্রিয় সালাম প্রদান করে। এ সময় জেলা প্রশাসনের পক্ষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক প্রশান্ত কুমার দাস, আওয়ামী লীগ, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। জানাজা শেষে ইউসুফ হোসেন কালুর মরদেহ বিশেষ ব্যবস্থায় তার গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠীর রাজাপুরের গালুয়া ইউনিয়নের কানুদাসকাঠী গ্রামের বাড়ি নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে বাদ জোহর দ্বিতীয় নামাজে জানাজা শেষে তার মরদেহ পারিবারিক গোরস্থানে দাফনের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর মো. নাজমুল হুদা। এর আগে বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত সোমবার বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে ইন্তেকাল করেন ভাষা সৈনিক ইউসুফ হোসেন কালু (ইন্নালিল্লাহি ওয়াইন্না ইলাইহে রাজেউন)। মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী এবং এক ছেলে সহ অসংখ্য গুনগ্রাহী রেখে গেছেন। ভাষা সৈনিক মুক্তিযোদ্ধা ইউসুফ হোসেন কালুর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ, শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন এবং তার রুহের মাগফেরাত কামনায় বিবৃতি দিয়েছেন জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি, বরিশাল সদর আসনের এমপি ও পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক, সিটি মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ, মহানগর বিএনপি’র সভাপতি মজিবর রহমান সরোয়ার, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. ছাদেকুল আরেফিন এবং জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার সহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ। পারিবারিক সূত্র জানায়, ১৯৪৮ সালে বরিশাল বিএম স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যায়নরত অবস্থায় ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন কালু। প্রগ্রেসিভ ছাত্রফ্রন্টের নেতা এমায়দুলের নেতৃত্বে মিছিলে যোগ দিয়ে প্রথম দিনই পুলিশের লাঠি চার্জে আহত হন তিনি। মেট্রিকুলেশন পাস করে ১৯৫১ সালে বিএম কলেজে এইচএসসি’তে (কমার্সে) ভর্তি হওয়ার পর ভাষা সংগ্রামে আরও সম্পৃক্ততা বেড়ে যায় তার। শিক্ষা জীবনের প্রথমে ছাত্র ইউনিয়ন করেছেন কালু। ৫২ সালে যোগ দেন ছাত্রলীগে। পরে জড়িয়ে পড়েন আওয়ামী রাজনীতিতে। তিনি স্বৈরাচার বিরোধী ও প্রতিটি প্রগতিশীল আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। ইউসুফ কালু ১৯৩১ সালের ১৭ জানুয়ারি ঝালকাঠীর রাজাপুরের কানুদাসকাঠী মিয়াবাড়িতে জন্মগ্রহন করেন। তার বাবা ওবায়দুল করিম রাজা মিয়া ও মা ফাতেমা খাতুন। ৩ ভাই ও ২ বোনের মধ্যে সবার ছোট ছিলেন তিনি।
Leave a Reply